পাতালে মেট্রোর রেকে আগুন, অসুস্থ যাত্রীদের আর্ত চিত্‍কার, দায়সারা জবাব মেট্রো কর্তৃপক্ষের



মেট্রো রেলে ফের দুর্ভোগ। এবার আগুন লেগে ছড়াল আতঙ্ক। দমদমগামী মেট্রোয় ময়দান স্টেশনে ঢোকার মুখেই আগুন লাগে।

দমদমগামী এসি মেট্রোর কামরার নিচ থেকে ভেসে আসে স্পার্কিংয়ের শব্দ যা এতটাই জোরালো ছিল যে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

মেট্রো ট্রেনটি ময়দান স্টেশনে ঢুকছিল। কিন্তু, যাত্রীদের তুমুল চিত্‍কারে তার আগেই ট্রেন থামিয়ে দেন চালক।

পুরো কামরা ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। বিপদ বুঝে চালক ট্রেনের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ফলে আতঙ্কের সেই পরিবেশকে আরও বীভিষিকাময় করে তোলে অন্ধকার।

অন্ধকারে যাত্রীরা তুমুল চিত্‍কার চেচামেচি করতে থাকেন। অনেকে দরজা জানলায় সমানে বাড়ি মারতেও থাকেন।

অন্ধকার সুড়ঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা এসি রেকের মধ্যে তখন যাত্রীরা আর্ত চিত্‍কার করছেন। ট্রেনের ভিতরে আপতকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে মেট্রো, তার কোনও কিছুই কাজ করেনি। একে অন্ধকার, তার সঙ্গে প্রবল ধোঁয়া, পাশাপাশি আতঙ্কিতদের চিত্‍কার অনেকেই মনে করেছিলেন প্রাণ নিয়ে আর বাড়ি ফিরতে পারবেন না।

বেশ কিছু যাত্রী মেট্রোরেলের এমার্জেন্সি নম্বরেও ফোন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, অভিযোগ উল্টো দিক থেকে কোনও উত্তর মেলা তো দূরের কথা কেউ ফোনই তোলেননি। এরমধ্যে বেপাত্তা হয়ে যান চালকও। অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যেই অসহায় যাত্রীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেনটি। কিছু পরে কয়েকজন যাত্রী কামড়ার বেশ কয়েকটি জানলার কাঁচ ভেঙে ফেলেন। কামরার ভিতরে থাকা অগ্নি-নির্বাপক সিলিন্ডার দিয়ে দরজা ভাঙারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এতে কোনও লাভ হয়নি। কোনও যাত্রীই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি।

ইতিমধ্যে অন্ধকারের মধ্যে চিত্‍কার চেচামেচি, হুড়োহুড়ি, আতঙ্ক এবং ধোঁয়ার জেরে বেশ কিছু যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। যাত্রীদের দাবি প্রায় পৌনে একঘন্টা পড়ে ঘটনাস্থলে আসে উদ্ধারকারী দল। এমার্জেন্সি গেট দিয়ে একে একে সমস্ত যাত্রীকে বের করে আনা হয়।

 অসুস্থ যাত্রীদের স্ট্রেচারে করে প্ল্য়াটফর্মে তোলা হয়। তাঁদের কয়েকজনকে মেডিকাল কলেজে এবং বাকিদের এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মহিলা যাত্রীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা জানান, মেট্রোর কামড়া থেকে জীবিত ফেরার আশাই করেননি। যাত্রীদের অভিযোগ রেকের ভিতরে থাকা কোনও সুইচ এবং এমার্জেন্সির ব্যবস্থার কিছুই কাজ করেনি। মোবাইল নেটওয়ার্কও ঠিক মতো কাজ না করায়, সমস্যা আরও বেড়ে যায়। গোটা ঘটনায় যাত্রীরা মেট্রো-কর্তৃপক্ষের দিকেই আঙুল তুলেছেন।

মেট্রো রেলের পরিকাঠামো যে সঠিক জায়গায় নেই তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কলকাতা মেট্রো রেলে এখনও অনেক রেক এমন চালানো হয় যার জীবন অন্তত ১৫ বছর আগে শেষ হয়ে গিয়েছে।

বর্তমানে যে এসি রেক চলে, তারাও তাদের শেষ সময়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। এসবের সঙ্গে জুড়েছে খারাপ রক্ষণাবেক্ষণ। বলতে গেলে এককালে এশিয়ার গৌরব তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা কলকাতা মেট্রো এখন ধুঁকছে।

মেট্রোর কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার তদারকি করছে। কী কারণে আগুন লাগল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যস্ত সময়ে মেট্রোয় এমন ঘটনার পর এই রুটে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সবমিলিয়ে মেট্রো পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে আরও মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের দায়সারা জবাব। বৃহস্পতিবার বিকেলে দমদমগামী এসি মেট্রো রেকে কোনও ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এটা মানতেই রাজি নয় তাঁরা।

এমনকী পুরো ঘটনাটা কীভাবে ঘটেছে এবং কী হয়েছে সেই সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোনও ধারণা দিতে পারেননি কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়।

মেট্রোর এসি রেকে ধোঁয়া কীভাবে তৈরি হল বা ট্রেনের কামরার নিচে কোনও অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়েছিল কিনা তা না জেনে কোনওভাবে মন্তব্য করা যাবে না বলে জানান ইন্দ্রাণী।
Share on Google Plus
JanaSoftR

0 comments:

Post a Comment