অনার কিলিং-এর ছায়া এবার এরাজ্যেও। হিন্দু ছেলের সঙ্গে প্রেম করায় বাবা ও দাদার হাতে খুন মুসলিম তরুণী। মৃতার নাম জাহানা খাতুন, বয়স ১৯। পূর্ব বর্ধমানের দু'নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে গত মাসের ৩০ তারিখ উদ্ধার হয় কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ।
হাতে খোদাই করে রাখা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে কলকাতা তিলজলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দাদা মহম্মদ জাহিদ এবং বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার বাবা মহম্মদ মুস্তাক।
জেরায় দোষ স্বীকার করেছেন ২ জনেই। সামাজিক সম্মান রক্ষার্থে খুন বলে জানিয়েছে তারা। ধৃতদের মঙ্গলবার তোলা হয় আদালতে। দু'জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মৃতার বাড়ি বিহারের মুজাফ্ফরপুর জেলার চক এলাহাবাদ গ্রামে। তবে নাগপুরে এক হিন্দু ধর্মের ছেলের সঙ্গে প্রেম করতেন তিনি। বাড়ির অমতেই দীর্ঘদিন ধরে চলে এই প্রেমপর্ব।
এমনকি নাগপুরে ছেলেটির কাছে পালিয়েও যান তিনি। তবে কোনওমতে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন।
এরপর অন্য একটি ছেলের সঙ্গে তাঁর বিয়ের ব্যবস্থাও করে। মেহেন্দিও হয়ে যায়। তবে আগের প্রেমের কথা জানাজানি হতেই ভেঙে যায় সেই বিয়ে। জানা গিয়েছে, এরপর ওই তরুণীকে কলকাতায় নিয়ে আসে তাঁর বাবা ও দাদা। নিয়ে আসার সময় পথেই শ্বাসরোধ করে খুন করে তাঁকে।
মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় ভারী পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়। ফেলে রাখা হয় পূর্ব বর্ধমানের নবগ্রাম ময়না এলাকার দু'নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে। এরপর গতমাসের ৩০ তারিখ ওই কিশোরীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পাঠানো হয় ময়নাতদন্তে।
ময়না তদন্তে দেখা যায় মৃতের দুই উরুতে মেহেন্দী দিয়ে চারটি ফোন নম্বার এবং এক যুবকের নাম লেখা রয়েছে
এরপর সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে পুলিশ।
জানা যায়, ফোন নম্বরটি নাগপুরের এক যুবকের। সেই যুবকের থেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান তদন্তকারীরা। জানতে পারেন সমস্ত বিষয়টি। তারপরেই তরুণীর বাবা ও দাদার উপর সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের।
অনুমান, প্রাণনাশের আশঙ্কাতেই শরীরে প্রেমিকের ফোন নম্বর খোদাই করেন ওই তরুণী।
কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বর্ধমান পুলিশ। এরপরেই তদন্তের স্বার্থে কলকাতার তিলজলা এলাকা থেকে প্রথমে আটক করা হয় মৃতার দাদা মহম্মদ জাহিদকে।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় দোষ কবুল করে সে। তারপরেই বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মৃতার বাবা মহম্মদ মুস্তাককে। আজ, মঙ্গলবার ধৃত ২ জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।

0 comments:
Post a Comment